আলু চাষে লোকসান গুনছে কৃষক, লাভ পাইকারদের

রংপুর জেলা প্রতিনিধি:

দেশের সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত রংপুরে মৌসুমের শুরুতে চার টাকায় নেমেছে আলুর কেজি। এত কম দামে আলু বিক্রি করে প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চার টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করে দিশেহারা কৃষকরা। চালান তোলা তো দূরের কথা, ক্ষেত থেকে আলু তুলে ভ্যানভর্তি করে বাজারে আনার খরচই উঠছে না তাদের।

এদিকে, খুচরা বাজারে এখনও প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে চার টাকা কেজিতে আলু কিনে লাভবান হচ্ছেন পাইকার, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৫৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমি। অথচ এবার অতীতের রেকর্ড ভেঙে আলু চাষ হয়েছে ৫৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। যা দেশের মোট চাহিদার চার ভাগের এক ভাগেরও বেশি।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা আগাম আলু চাষ করেছেন। লাভের আশায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ পড়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেখানে এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকাও উঠেছে না। গত বছর আগাম আলু চাষিরা প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করতে পারলেও এবার চার-পাঁচ টাকায় বিক্রি করছেন।

পাশাপাশি কার্ডিনাল আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা। আলুর দাম না পাওয়ায় রংপুরের হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় বেশি চাষ হওয়ায় মহাজনরাও আলু নিতে আগ্রহী না। ফলে পানির দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুর নগরীর আলুটারী, মাহিগঞ্জ, নবদীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় আলু চাষ বেশি হয়। প্রতি বিঘায় আলু চাষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে অনেকেই আগাম আলু চাষ করেন। তারা আগে তুলে আগে বিক্রি করে দেন। আবার অধিকাংশ চাষি আলু পরে তোলেন। এগুলো নিজেদের বাড়িতে সংরক্ষণ করেন কেউ কেউ, আবার অনেকেই হিমাগারে রেখে দেন। দাম বাড়লে তখন বিক্রি করেন। কিন্তু আগাম আলু হিমাগারে রাখলে পচন ধরে।

মাহিগঞ্জ এলাকার আলু চাষি জাহেদুল ইসলাম ও ওসমান আলী জানান, এবার আগাম আলু উৎপাদন করে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারের মতো কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হইনি আমরা।

পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ক্ষেত থেকে আলু তুলে বাজারে এনে পাইকার কিংবা আড়তদারের কাছে চার-পাঁচ টাকা কেজি বিক্রি করেন একজন চাষি। সেই আলুর কেজি ছয়-সাত টাকায় আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন পাইকার। এই আলু ব্যবসায়ীর কাছে নয় থেকে ১০ টাকা বিক্রি করেন আড়তদার। ব্যবসায়ী সেই আলু নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন ১৩ থেকে ১৪ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ী সেই আলুর কেজি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন ২০ টাকা। তবে চাহিদা অনুযায়ী একটু কমবেশিতেও বিক্রি হয়।

পাইকারি আলু ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনি না। আমরা সবজির পাইকারি হাট থেকে আলু কিনি। সেখান থেকে কিনে আনার পর পরিবহন খরচ, কর্মচারীর বেতন, দোকান ভাড়া, কুলি খরচসহ সব মিলিয়ে কেজিতে এমনিতেই দুই থেকে তিন টাকা বেশি পড়ে। এজন্য নয় থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবার রংপুরে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আগাম আলুর চাষ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। খুব কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।